গত ১৫ বছর বাণিজ্যিক সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপ ছিল শেখ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। সর্বশেষ শেখ সোহেল ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি এবং তার ভাই শেখ রুবেল ছিলেন সহ-সভাপতি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাধারণ সদস্যরা শেখ সোহেলের নেতৃত্বাধীন কমিটির সবাইকে পদত্যাগে বাধ্য করান। পরবর্তীতে সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে গঠন করা হয় ৫ সদস্যের এডহক কমিটি। প্রবীণ দল নিরপেক্ষ ব্যবসায়ীরাই ছিলেন এডহক কমিটির সদস্য।
রোববার দুপুরে ‘মব তৈরি’ করে সেই কমিটি ভেঙে দিয়েছে কিছু ছাত্র। পরে ১১ সদস্যের আরেকটি কমিটি ঘোষণা করেছে তারা। শেখ সোহেলের নেতৃত্বাধীন পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব, কোষাধ্যক্ষ, ১নং পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন নতুন এডহক কমিটির শীর্ষ পদে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, পণ্যবাহী নৌযান মালিকদের সংগঠন হচ্ছে নৌপরিবহন মালিক গ্রুপ। এর আগে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাই সংগঠন পরিচালনা করতেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এর ছন্দপতন ঘটে। তখন শেখ বাড়ির নির্দেশে ভোট ছাড়াই মালিক গ্রুপের কমিটি গঠন হতো। ইতোপূর্বে শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল দুই বার এবং শেখ সোহেল দুই বার সভাপতি হতেন। তাদের অনুগতরা হতেন পরিচালক।
গত ১৪ আগস্ট শেখ সোহেলের নেতৃত্বধীন কমিটির সদস্যরা পদত্যাগ করেন। ওই দিনই ৫ সদস্যের এডহক কমিটি এবং পরদিন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। গত ৩০ নভেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক সদস্যের মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে এডহক কমিটি সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। গত ৪ মাসে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি তোলেনি।
ব্যবসায়ীরা জানান, সদস্যদের একটি অংশ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে ঐক্যমতে ছিলেন। আরেকটি অংশ সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে চেয়েছিলেন। দুই পক্ষের অনড় অবস্থানের মধ্যেই গতকাল রোববার ছাত্রদের একটি দল মালিক গ্রুপের কার্যালয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা কমিটি ভেঙে দিয়ে ১১ সদস্যের আরেকটি এডহক কমিটির ঘোষণা দেয়।
নতুন কমিটির আহ্বায়ক এস এম আকবর হোসেন ছিলেন শেখ সোহেলের নেতৃত্বধীন কমিটির ১নং পরিচালক। ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি এস এম নজরুল ইসলামের ভাই এস এম রফিকুল ইসলাম, ৫নং সদস্য কাজী গোলাম ফারুক ইতোপূর্বে শেখ সোহেলের নেতৃত্বাধীন পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব এবং ৬নং সদস্য সঞ্জীব দাস ওই কমিটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব এস এম আজহার আলী ছিলেন সংগঠনের বেতনভুক্ত সচিব। ওই সময় সাবেক মহাসচিব অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। পরে নৌযান কিনে তিনি মালিক সমিতির সদস্য হন।
মালিক গ্রুপের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে কোনো অচলাবস্থায় বাণিজ্যিক সংগঠনে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কোনো পক্ষ চাইলে তদবির করে প্রশাসক নিয়োগ করাতে পারতো। কিন্তু তা না করে যেভাবে কমিটি হচ্ছে তা’ খারাপ নজির তৈরি করছে।
খুলনা গেজেট/ টিএ